পানির অনুপস্থিতে অথবা পানি ব্যবহার করা অসম্ভব হলে যেসব বিষয়ের জন্য পবিত্রতা ফরজ সেসবের জন্য তায়াম্মুম করা ফরজ। আর যেসবের জন্য পবিত্রতা মুস্তাহাব সেসবের জন্য তায়াম্মুম করা মুস্তাহাব, যেমন কুরআন তিলাওয়াত করা।
তায়াম্মুম শরীয়তভুক্ত হওয়ার দলিল
১। আল্লাহ তাআলা বলেন,(فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ ){অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো।} [সূরা আল মায়েদা:৬]২। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে যা আমার পূর্বে কাউকে দেয়া হয়নি: একমাস হেঁটে আসার দূরত্ব পর্যন্ত আমার ভীতি বিস্তৃত করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। আর সমস্ত জমিন আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্র করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর আমার উম্মতের কোনো ব্যক্তির যখন নামাজের সময় হবে তখন সে যেন তা পড়ে নেয়।’(বর্ণনায় বুখারী)
তায়াম্মুম শরীয়তভুক্ত হওয়ার হিকমত
১। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য সহজ করা।২। যেসব অবস্থায় পানি ব্যবহারের ফলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তা দূর করা, যেমন অসুস্থ হয়ে পড়া, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকা ইত্যাদি।৩। ইবাদতের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখা, পানি না থাকার কারণে ইবাদত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না যাওয়া।
তায়াম্মুম করা কখন বৈধ?
১। পানির অনুপস্থিতিতে।আল্লাহ!তাআলা বলেন, (فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ) {অতঃপর পানি না!পাও, তবে তায়াম্মুম করো।}২।!পানি থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার!করতে অপারগ হলে।.যেমন অসুস্থ অথবা বৃদ্ধ ব্যক্তি!যে নড়াচড়া করতে পারে না এবং তার কাছে এমন!ব্যক্তিও নেই যে তাকে অজু করার ব্যাপারে সাহায্য করবে।৩। পানি ব্যবহার করার ফলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে।যেমন :ক। অসুস্থ ব্যক্তি যদি পানি ব্যবহার করে তবে তার অসুস্থতা বেড়ে যাবে।খ। প্রচন্ড ঠান্ডায় যদি পানি গরম করার মতো কিছু না থাকে এবং পানি ব্যবহার করলে অসুস্থতা বেড়ে যাবে এ ধারণার পাল্লা ভারি থাকে, এ অবস্থায় তায়াম্মুম করার অনুমতি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক, প্রচন্ড ঠান্ডা থাকার কারণে তায়াম্মুম করে নামাজের ইমামতি করার পর, আমর বিন আস রাযি. এর কাজকে নাকচ করে না দেয়া এ ক্ষেত্রে প্রমাণ। (বর্ণনায় আবু দাউদ)গ। কোনো ব্যক্তি যদি পানি থেকে দূরে কোথাও অবস্থান করে এবং তার সাথে পান করার মতো সামান্য পানি থাকে আর অন্য পানি হাজির করতে অপরাগ হয়।
তায়াম্মুমের বর্ণনা
১। মাটিতে একবার উভয় হাত মারবে।
২। এরপর ধুলা!হালকা করার জন্য দু’হাতে ফুঁ দেবে,।
৩। এরপর দু’হাত দিয়ে চেহারা মাসেহ করবে।
৪। এরপর আবার মাটিতে দু’হাত মারবে।
৫। এরপর ধুলা হালকা!করার জন্য দু’হাতে ফুঁ দেবে,।
৬। এরপর বাম হাত ডান হাতের উপরের অংশে কনুই র্পযন্ত বুলাবে। এবং কনুই থেকে নিচের অংশে কব্জি র্পযন্ত বুলাবে। অতঃপর একই কায়দায় ডান হাত দিয়ে বাম হাত বুলাবে।
৭। উল্লেখিত পদ্ধতিতে তায়াম্মুম করার দলিল হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তায়াম্মুম হলো জমিনে দু’বার হাত মারা। একবার চেহারার জন্য, অন্যবার কনুই পর্যন্ত দু’হাতের জন্য’। (বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
[মুস্তাদরাক আলাস সাহি হাইন]
তায়াম্মুমের ফরজসমূহ
১। নিয়ত করা।
২। চেহারা মাসেহ করা।
৩। দু’হাত মাসেহ করা। ইমামদের কেউ কেউ আরো কয়েকটি বিষয় ফরজ বলে গণ্য করেছেন। আর তা হলো:
৪। ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অর্থাৎ প্রথমে চেহারা ও পরে দু’হাত মাসেহ করা।
৫। মুয়ালাত তথা অবিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা। অর্থাৎ চেহারা মাসেহ করার পর বিলম্ব না করে হাত মাসেহ করা।
যেসব কারণে তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যায়
১। পানি বর্তমান থাকা।২. অজু ভঙ্গকারী কোনো কিছু সংঘটিত হওয়া, যেমন বায়ু বের হওয়া।৪. গোসল ফরজ হয় এমন বিষয় সংঘটিত হওয়া, যেমন স্বপ্নদোষ।
৫. যেসব ওজরের কারণে!তায়াম্মুম করা শরীয়তসিদ্ধ সেসব কারণ!দূর হয়ে যাওয়া।, যেমন অসুস্থতা ইত্যাদি।,
বিজ্ঞান যা বলে
জমিনের মাটি তার পরমাণুগুলোতে পবিত্রতাকারী পদার্থ বহন করে। এ পদার্থ সকল প্রকার জার্ম ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। যেকোনো মাইক্রোব অথবা ভাইরাস ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।
মাসায়েল
১। পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুম!করে নামাজ পড়া পেশাব পায়খানার চাপের মুখে অজু রক্ষা করে!নামাজ পড়ার চেয়ে অনেক উত্তম।
২। দেয়াল অথবা কার্পেটের ওপর ধুলোবালি থাকলে সেখানে হাত মেরে তায়াম্মুম করা বৈধ হবে।
৩। তায়াম্মুমকারী তায়াম্মুম ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত যত ইচ্ছা ফরজ ও নফল নামাজ আদায় করতে পারে।
৪। অজুকারী তায়াম্মুমকারীর পেছনে নামাজে ইক্তেদা করতে পারে; কেননা আমর ইবনে আস রাযি.যখন প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে তায়াম্মুম করে তাঁর সাথীদের ইমামতি করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা নাকচ করে দেননি। (বর্ণনায় আবু দাউদ)
৫। যে ব্যক্তি তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ল অতঃপর সময় চলে যাওয়ার পূর্বেই পানি পেল, সে নামাজ পুনরায় পড়বে না। আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘দুই ব্যক্তি সফরে বের হলো। পথিমধ্যে নামাজের ওয়াক্ত হলো তবে তাদের সাথে কোনো পানি ছিল না। অতঃপর তারা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করল। নামাজ পড়ল। এরপর নামাজের সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই পানি পেয়ে গেল। দু’জনের একজন অজু করে পুনরায় নামাজ আদায় করল। পক্ষান্তরে অন্যজন করল না। এরপর উভয়েই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এল। ঘটনার বর্ণনা দিল। যে ব্যক্তি নামাজ পুনরায় পড়েনি, তাকে তিনি বললেন,‘তুমি সুন্নত অনুযায়ী আমল করেছ এবং তোমার নামাজ শুদ্ধ হয়েছে। আর যে অজু করে পুনরায় নামাজ পড়েছে তাকে তিনি বললেন, ‘তোমার ছাওয়াব দ্বিগুণ হয়েছে।’ (বর্ণনায় আবু দাউদ)
৬। যে ব্যক্তি নামাজের পূর্বে বা মাঝখানে পানি পেল তার উচিত হবে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘পবিত্র মাটি মুসলমানের পবিত্রতা অর্জনের বস্তু। যদিও সে দশ বছর পর্যন্ত পানি না পায়। আর যদি পানি পায় তবে সে যেন তা তার চামড়ায় স্পর্শ করায়। কেননা এটা তার জন্য উত্তম।’
৭। মুসলমানকে কোনো কিছুই নামাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে না, মুসলমান নামাজকে সুনির্দিষ্ট সময় থেকে পিছিয়েও দেয় না। সে হিসেবে যদি কেউ পানি ব্যবহার করতে অপারগ হয়, অথবা পানি না পায়, তাহলে সে তায়াম্মুম করে নেবে। আর যদি তায়াম্মুম করতেও অপারগ হয় তবে পবিত্রতা ব্যতীতই নামাজ পড়ে নেবে।
৮।. যে পানি ও মাটি কোনোটাই পাবে না সে পবিত্রতা ব্যতীতই সময়মতো নামাজ আদায় করে নেবে। এবং তা আর পুনরায় আদায় করতে হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, (فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ ) {অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর।} [আত-তাগাবুন:১৬]
তায়াম্মুম শেষ সময় পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া জায়েয আছে যদি পানি পাওয়ার আশা থাকে। আর যদি পানি পাওয়ার আদৌ কোনো আশা না থাকে তাহলে নামাজের সময় আসার পরপরই নামাজ আদায় করা উত্তম হবে। কেননা উত্তম হলো সময়মতো নামাজ পড়ে নেয়া।