জানাযার নামায ও নিয়ম কারণ

hadith-bangla-janajar-namaz-porar-niyom-karon








জাযানার নামায ওয়াজিবে কিফায়া। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায আদায় করা জরুরী। যদি কেউ আদায় না করে তাহলে সকলেই গোনাহগার হবে। আর কিছু মানুষ আদায় করলে অংশগ্রহণকারীরা সওয়াব পাবে। আর অন্য লোকেরাও দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাবে। 

 জানাযার নামাযের ফরযও সুন্নতসমূহ 

জানাযার নামাযের ফরয দু'টি: 

১। চার বার আল্লাহু আকবার বলা।

। জানাযার নামায দাঁড়িয়ে পড়া।

সুন্নত তিনটি:

। আল্লাহ তাআলার হামদ ও সানা পড়া।

২। নবী করীম সা.-এর উপর দরূদ পড়া।

৩। মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করা।

জানাযার নামাযের সুন্নত তরিকা:

জানাযার নামাযের মাসনুন ও মুস্তাহাব তরিকা হলো, মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে ইমাম সাহেব তার বুক বরাবর দাঁড়াবেন। আর সকল মুসল্লিরা মনে মনে বা মনের সাথে মুখে উচ্চারণ করে এ নিয়্যত করবে যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করার উদ্দেশ্যে জানাযার নামায পড়ছি। তারপর الله اكبر বলে উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠিয়ে নাভির নিচে বাধবে। তারপর সানা পড়বে। 

সানা এই-

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ.

এরপর দ্বিতীয় তাকবির দিয়ে। নামাযে যে দরূদ শরীফ পড়া হয় সে দরূদ শরীফ পাঠ করবে। 

এরপর তৃতীয় তাকবির দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করবে। মৃত ব্যক্তি প্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষ হলে এই দুআ পড়বে:

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي لِحَيْنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا اللَّهُمَّ  مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْأَسْلَامِ وَمَنْ  تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِمَانِ

আর অপ্রাপ্ত ছেলে হলে এই দুআ পড়বে: اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلَهُ لَنَا أَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلَهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَعًا.

আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে হলে এই দুআ পড়বে:

اللهُمَّ اجْعَلُهَا لَنَا فَوْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا أَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلُهَا لَنَا هَافِعَةٌ وَمُشَفَعَةٌ

এরপর চতুর্থ তাকবির দিয়ে সালাম ফিরাবে। প্রথম তাকবির ছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ তাকবিরে হাত উঠাবে না। বরং হাত না উঠিয়ে তাকবির দিবে।

মাসআলা: জানাযার নামায সহিহ হওয়ার জন্য সে সব শর্তের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী, যা নামাযের জন্য জরুরী। যথা-পবিত্রতা অর্জন করা অর্থাৎ শরীর, কাপড় এবং নামাযের স্থান পবিত্র হওয়া। সতর ঢাকা। কিবলামুখী হওয়া এবং জানাযার নিয়্যত করা।

মাসআলা: যে স্থানে দাঁড়িয়ে জানাযার নামায আদায় করছে, যদি উক্ত

স্থান পবিত্র হয়; তাতে নাপাকীর কোনো চিহ্ন দেখা না যায় তাহলে জুতা- স্যান্ডেল খোলে জমিনে দাঁড়ানো উচিত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য সেখানে নাপাকীর কোনো চিহ্ন না থাকায় যথেষ্ট। এমতাবস্থায় মৌলিকভাবে তাকে পাক ধরে নেয়া হবে। আর যদি উক্ত জায়াগার ব্যাপারে সন্দেহ থাকে তাহলে জুতা খোলে তার উপর দাঁড়াবে। জুতা থেকে পা বের করে জুতার উপর রাখবে। কেননা, জুতার উপরের অংশ যার সাথে পা লাগছে, তা পবিত্র হওয়াই যথেষ্ট। জুতার তলায় কোনো নাপাকী লেগে থাকলে তাতে নামাযের কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু যদি জুতা না খোলে বরং জুতা পরিহিত অবস্থায়ই নামায পড়ে তাহলে জুতা এবং জুতার তলা উভয়টি পাক হওয়া শর্ত।

মাসআলা : জানাযার নামাযে তাকবির বলা জরুরী। অর্থাৎ আল্লাহ আকবার বলে নামায শুরু করা এবং তা ছাড়াও আরো তিনটি তাকবির বলা জরুরী। অর্থাৎ জানাযার নামাযের রুকন হলো, চার তাকবির। এই চারটি তাকবির ফরয। আল্লাহু আকবার বলে নিয়্যত বাধা এবং এরপর আরো তিনটি তাকবির বলা ফরয। তবে জানাযার নামাযে যে সব দুআ পড়া হয় তা সুন্নত। যদি দুআ ছুটেও যায় তবুও তাকবির দিয়ে থাকলে নামায আদায় হয়ে যাবে।

মাসআলা: যদি কোনো ব্যক্তি জানাযার নামাযে এমন সময় এসেছে যে, তার আসার পূর্বে কিছু তাকবির চলে গেছে। তাহলে উক্ত ব্যক্তির জন্য অন্যান্য নামাযের ন্যায় আসা মাত্রই জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ না করা চাই; বরং সে ইমামের সামনের তাকবিরের অপেক্ষায় থাকবে। যখন ইমাম সাহেব সামনের তাকবির বলবেন তখন এ ব্যক্তিও হাত উঠিয়ে তাকবির বলে নামাযে শরীক হবে। এটাই তার তাকবিরে তাহরিমা। এরপর ইমাম যখন সালাম ফিরাবে তখন এ ব্যক্তি ইমামের সালাম ফিরানোর পর বাকী তাকবিরগুলো বলে তারপর সালাম ফিরাবে। 

আর যদি জানাযা তৎক্ষণাত উঠিয়ে নেয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে উক্ত তাকবিরগুলোর মাঝে তার জন্য কোনো কিছু পড়া জরুরী নয়।

মাসআলা : যদি মাসবুক ইমামের তাকবিরের অপেক্ষা করা ছাড়াই নামাযে শরীক হয়ে যায়, তবে এই শরীক হওয়াটা ধর্তব্য তো হবে কিন্তু যেহেতু জানাযার নামাযের প্রতিটি তাকবির এক একটি রাকাতের স্থলাভিষিক্ত তাই এ তাকিবরটি ধর্তব্য হবে না; বরং ইমামের সালাম ফিরানোর পর দ্বিতীয় বার এই তাকবির বলতে হবে।

মাসআলা : যদি ইমাম চারটি তাকবির বলে ফেলার পর কোনো ব্যক্তি জানাযার নামাযে উপস্থিত হয় তাহলে এই নামাযে শরীক হতে চাইলে তাৎক্ষণিক ইমামের সালাম ফিরানোর পূর্বেই তাকবির বলে নামাযে শরীক হয়ে যাবে। অতপর ইমামের সালাম ফিরানোর পর অবশিষ্ট তিনটি তাকবির বলে সালাম ফিরাবে।

মাসআলা : যদি ইমাম জানাযার নামাযে ভুলবশত তিন তাকবির বলে সালাম ফিরিয়ে দেয় অতপর স্মরণ হওয়ার পর বা করিয়ে দেয়ার পর চতুর্থ তাকবির বলে দ্বিতীয় বার সালাম ফিরায় তাহলে নামায হয়ে যাবে। দ্বিতীয় বার নামায পড়া জরুরী নয়।

মাসআলা: যদি জানাযার নামায শুরু হয়ে যায় আর ওযু করতে গেলে নামায শেষ হয়ে যাওয়ার আশাঙ্কা হয় তাহলে তায়াম্মুম করে নামায পড়ে নিবে। এটা তখনই জায়িয-যখন চারো তাকবিরই ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হবে। যদি ওযু করার পর শেষ তাকবিরে অংশ গ্রহণ করা সম্ভব হয়, তাহলে তায়াম্মুম করার অনুমতি নেই। এমতাবস্থায় ওযু করে নামায পড়তে হবে।

মাসআলা : জানাযার নামাযে তিনটি কাতার করা মুস্তাহাব। আর যদি লোক সংখ্যা বেশি হয় তবে সম্ভব হলে, বেজোড় সংখ্যায় কাতার করবে। যথা-তিন, পাঁচ, সাত ইত্যাদি।

মাসআলা : যদি বাচ্চা জীবিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে এবং জন্মের পর তার আওয়াজ শোনা যায় এরপর মৃতুবরণ করে, তাহলে তার জানাযার নামায পড়া জরুরী। এ ধরনের শিশু এবং বড়দের জানাযার নামাযের পদ্ধতি একই। শুধু পার্থক্য এতোটুকু যে, শিশুর জানাযায় তৃতীয় তাকবির পর এই দুআটি পড়বে :

اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلَهُ لَنَا أَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلَهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَعًا আর মেয়ে হলে এক। এর স্থলে এجْعَ। পড়বে।

আরো পড়ুন....

বাংলা অর্থ ও অনুবাদ সহ কুরআন পরুন  সহিহ নামাজ শিক্ষা চিত্রসহ 
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর জীবনী ও তার পরিচয়।নামাজ শিক্ষা নামাজের নিয়ম কারণ

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন