রাতটি মুসলমানদের জন্য ভাগ্য রজনি হিসেবে সম্মানিত। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদাপূর্ণ রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল ! কদর তথা সম্মানিত রাত।
লাইলাতুল কদরের রাত ! হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত।
পবিত্র কুরআনুল কারিম নাযিলের মাধ্যমে
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই রাতকে ! হাজারের মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উত্তম এবং মহা সম্মানিত রাত হিসেবে 'আমাদেড় জন্য দান করেছেন।
প্রতিবছর রমজান মাসের শেস দশকের রাতগুলোর মধ্যে কোনো ১ বিজোড় রাত
হলো ভাগ্য নির্ধারন বা লাইলাতুল কদরের রাত।
যে রাতে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে,! সে রাতই লাইলাতুল কদর। আল্লাহতায়ালা
বলেন: !‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাজিল
করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে।'' আপনি কি জানেন,! মহিমাময় কদর রজনী কী? '' মহিমান্বিত কদর রজনী! হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম'।
সে রাতে ফেরেশতাগণ ! হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামকে! সমভিব্যহারে অবতরণ করেন! তাঁদেড় প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে ! সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে।
এই শান্তির ধারা''চলতে থাকে উষা বা ফজর পর্যন্ত।
(আল কুরআন, সুরা-৯৭ [২৫] আল কদর)
রমজান মাস পবিত্র কুরআন নাযিলের মাস।
শবে কদর কুরআন ! নাযিলের রাত। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমাড় হেরা পর্বতের
গুহায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ! ভপক্ষ থেকে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের ! মাধ্যমে রাহমতুল্লিল আলামিন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি ''মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করেন।
এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ রাতের! মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন।!এ রাতে মহান আল্লাহ
উম্মতে মুহাম্মাদিকে হাজার মাসের! ইবাদত-বন্দেগি ও আমলের সমান সাওয়াব'; দান করে। কুরআনুল কারিমের অন্য স্থানে এ রাতটিকে বরকতময় রাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন- হা-মীম।
শপথ' সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে;[কুরআন] এক বরকতময় রাতে নাজিল' করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে,! আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে ! রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’
(সুরা দুখান : আয়াত ১-৬)
কুরআন নাযিলের কারণে মর্যাদার এ রাতের
কথা উল্লেখ করার পড় যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে সে মাসেড় কথাও আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন ! এভাবে-আল্লাহ তায়ালা বলেন'' রমজান মাস! এমন ১টি মাস যে মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে মানবের মুক্তির দিশারি এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে।(সুরা-২ আল বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।
সুতরাং লাইলাতুল' ক্বদরের রাতে আল্লাহর ওইসব বান্দারা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত এবংমর্যাদার অধিকার্রি হবেন, যাদের সঙ্গে কুরআনের সম্পর্ক' বেশি। যিনি কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই নিজের জীবন ! পরিচালিত করবেন। বাস্তবজীবনে কোরআন-সুন্নাহর আমলে সাজাবেন'জীবন।
আর তারাই হবেন সফল।
রমজানের শেষ দশদিনের যেকোনো বেজোড় রাতে ! লাইলাতুলকদর তালাশ করা যায়,
অর্থাৎ ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ 'রমজান দিবাগত রাতগুলো;'। তবে অনেক আলেমদের গবেষনা
ও ব্যাখ্যায় ও বুজুর্গানেদ্বীনেড় মতে ২৬, তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ সাতাশ তারিখে পবিত্র শবে কদরেড় অন্যতম সম্ভাব্য রাত।
মর্যাদার এ রাত পেলে মুমিন বান্দা আল্লাহর
কাছে কী প্রার্থনা করবেন?! কী চাইবেন? এ সম্পর্কে হাদিসেড় একটি বর্ণনা এভাবে এসেছে- !হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন,! একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে! জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল' !'(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন,! আমি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি''তাতে আমি কী [দোয়া] পড়বো?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,! তুমি বলবে-
উচ্চারণ: 'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ'ফুয়্যুন ! তুহিব্বুল আ'ফওয়া; ফা'ফু আ'ন্নী।’
অর্থ: হে আল্লাহব আপনি ক্ষমাশীল! ক্ষমা করতে ভালোবাসেন! অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন!। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে,! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া! সাল্লাম এ রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ দশকে ! আজীবন ইতেকাফ করেছেন।
উম্মতে মুহাম্মদীর উদ্দেশ্যে ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,! ‘আমি কদরের রাতেড় সন্ধানে ![রমজানের]! প্রথম দশ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশ দিন। তারপর আমার প্রতি ওহি নাযিল করে জানানো হলো যে! তা শেষ! দশ দিনে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে,! সে যেন ইতিকাফ করে। তারপর মানুষ [সাহাবায়ে কেরাম] তাঁর সঙ্গে ইতেকাফে শরিক হয়।! (মুসলিম শরীফ)
কদর রাতের ফজিলত
মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল হওয়ার কারনে অন্যসব মাসের চেয়ে রমজান মাস বেশি ফজিলত এবং বরকতময় হয়েছে। আর রমজানেড় রাতগুলোর মধ্যে কোরআন নাযিলের রাত লাইলাতুল ! ক্বদর সবচেয়ে তাৎপর্যমণ্ডিত একটি রাত।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,! ‘আমি একে নাযিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জান ক্বদরের রাত কি?! কদরে্র রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরাহ কদর! আয়াত: ১-৩)।
''এ আয়াতের ব্যাখায় মুফাসসিরকুল শিরোমনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘এ রাতের ইবাদত ! অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম’।
(তানবিরুল মিকবাস মিন তাফসিরে ! ইবনে আব্বাসঃ ৬৫৪ পৃষ্ঠা)।
তাবেয়ি মুজাহিদ (র.) বলেন! এর ভাবার্থ হলো,
এ রাতের ইবাদত, তেলাওয়াত,! দরুদ কিয়াম ও অন্যান্য আমল হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও উত্তম!। ’
মুফাসসিররা এমনই ব্যাখ্যা করেছেন। আর এটিই সঠিক ব্যাখ্যা।(ইবনে কাসির: ১৮ খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা)।
শবে কদরের আমল ! সুতরাং লাইলাতুল কদর পেলে এ আমল ও দোয়া রাত ! অতিবাহিত করা জরুরি। তা হলো-
১. নফল নামাজ পড়া।
২. মসজিদে ঢুকেই দুই রাকাত (দুখুলিল মাসজিদ) নামাজ পড়া।
৩. দুই দুই রাকাত করে (মাগরিবের পড় ৬ রাকাত) আউওয়াবিনের নামাজ পড়া।
৪. রাতে তারাবির'নামাজ পড়া।
৫. শেষ রাতে সাহরির আগেভ ! তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া।
৬. সম্ভব হলে সালাতুত তাসবিহ পড়া।
৬. সম্ভব হলে তাওবার নামাজ পড়া।
৭. সম্ভব হলে সালাতুল হাজাত পড়া।
৮. সম্ভব হলে সালাতুশ শোকর এবং অন্যান্য নফল নামাজ বেশি বেশি পড়া।
৯. কুরআন তেলাওয়াত করা। সুরা কদর,!সুরা দুখান, সুরা মুয্যাম্মিল,!সুরা মুদ্দাসির, সুরা ইয়াসিন, সুরা ত্বহা, সুরা আর-রাহমান,! সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুলক,। সুরা কুরাইশ এবং ৪ কুল পড়া।
১০. দরূদ শরিফ পড়া।
১১. তাওবাহ-ইসতেগফার পড়া।! সাইয়্যেদুল ইসতেগফার পড়া।
১১. জিকির-আজকার করা।
১২. কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত দোয়াপড়া।
১৩. পরিবার পরিজন, বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া!করা, কবর জেয়ারত করা।
১৪. বেশি বেশি দান-সদকা করা।